রেজাউল করিম শেখ
.১.
একটা ব্যাপক বিশাল ও অভূতপূর্ণ গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেছে। এই অভ্যুত্থানের পেছনে মেন্ডেড ছিলো রাষ্ট্র সংস্কার ও সব রকমের বৈষম্যবিলোপ করা।
শুরুটা ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন দিয়ে। কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন ব্যাপক দমন পীড়নের শিকার হয়, তখন জনতা মাঠে নেমে আসে। শোষক তখন ক্ষমতার অন্ধমোহে খুনের নেশায় পাগল হয়ে চুড়ান্তভাবে দেশের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে তারা গণহত্যার মতো জঘন্যকান্ড ঘটায়। এই অবস্থায় কেবল একটিই পথ খোলা থাকে খুনির কুরশিকে হ্যাচকা টানে খান খান করে ফেলার। এবং অবধারিতভাবে ছাত্রদের সাথে মুক্তিকামী ও বিবেকবান সকল শ্রেণিপেশার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ে।
যার নির্ভার পরিণতি খুনি শোষক ও তার সাগরেদদের পলায়নপরতা।
এরপরই দায়িত্ব চলে আসে দেশপক্ষের শক্তির কাছে দেশটাকে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য হতে মুক্ত করার। সেই দায়িত্বগ্রহণ এখনও শেষ হয়নি। তবে আপদকালীন ব্যবস্থাপনায় ছাত্ররা সর্বোচ্চ তৎপরতা দেখিয়েছি; পাহারা দেওয়া, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, পরিচ্ছন্নতা অভিযান- সব মিলিয়ে অনবদ্য কর্মতৎপরতা দেখা গেছে। বাস্তবতা হলো, নৈরাজ্য দূর করে শান্তি ফেরাতে স্বাভাবিকভাবেই আরো সময় লাগবে। এর পেছনে অনেক কারণ আছে, খুব সহজ একটি কারণ হলো: দীর্ঘদিন মানুষকে বন্দি করে রাখার ফলে তারা মূলত আলো ও অন্ধকার বুঝতে কষ্ট পাচ্ছে। তাদের সময় দিতে হবে।
২.
একটা শ্রেণি বর্তমানের বিশৃঙ্খলা নিয়ে বেশ উষ্মা প্রকাশ করছেন, কেউ কেউ তীব্র ব্যঙ্গ করছেন। তারা বলছেন, এটি অমানবিকতা, অসভ্যতা, অভদ্রতা। কেউ কেউ বিশেষত ছাত্রদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। তাদের ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আমার মনে হয়েছে, এই কয়েকটি বিষয়ে আমার কাছে উত্তর রয়েছে। যা জানানো যেতে পারে।
অ. উষ্মা প্রকাশ করছেন এমন পরিচিত ও অপরিচিতদের খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছি, তারা নিরীহ আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহার ও হত্যাযজ্ঞ নিয়ে পুরোপুরি নির্বিকার ছিলেন। এমনকি এখন পর্যন্ত যে বিপুল প্রাণহানি ঘটেছে তার জন্য তাদের কোনো অনুশোচনা তারা দেখায়নি। কিন্তু অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে শোষকের প্রতি মানুষের ক্ষোভ প্রকাশের নিদর্শনকান্ডকে সামনে এনে কটাক্ষ করছেন। এই মানুষগুলো মূলত খুনিপক্ষেই অবস্থান করছেন পূর্বের মতো। তারা এখনো মানুষের পক্ষাবলম্বন করতে পারেননি।
আ. মানুষকে যে তুমুল নিষ্পেষণ করা হয়েছে, তার কোনো হিসাব এই মানুষদের কাছে নেই। কিংবা এরা এটি গণ্য করতে রাজি না। ফলে নির্যাতিত মানুষের যেভাবে সভ্য হয়ে উঠার কথা, তারা যে সেই সুযোগ পায়নি, সেটাও তারা বুঝতে অক্ষম।
ই. গণঅভ্যুত্থানে যারা যুক্ত হয়েছেন তাদের বৃহত্তর অংশ তো বিপ্লববাদী নন। মানে ছাত্র কিংবা জনতা যারাই নেতৃত্ব কিংবা অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের অধিকাংশই কেবল আন্দোলনকর্মী। তারা বিবেক কিংবা ভয়াবহ নিপীড়নের দশা হতে প্রতিশ্রুত মুক্তির জন্য পথে নেমেছেন। ফলে রাষ্ট্র সংস্কারের ধারণা ও প্রক্রিয়া তাদের অজানা। এটি স্বাভাবিক ঘটনাও। এই কারণে তারা যত অনিয়ম দেখেছেন, যত সেবা হতে বঞ্চিত হয়েছেন, সব বিষয়ে যার যার মতো সোচ্চার হচ্ছেন। যদিও রাষ্ট্র সংস্কার ও বৈষম্য বিলোপ একটি সুসংহত পরিকল্পনার ব্যাপার। এটি বুঝাতে এবং একটা বুঝ-ব্যবস্থার ভেতরে নিয়ে আসার কাজটি সময় সাপেক্ষ। তাদের সেই সময় দিতে হবে। সেই প্রচেষ্টার ভেতর আনতে হবে। অযথা বিষোদগার কোনো সমাধান হতে পারে না।
ঈ. যারা বিষোদগার করছেন, তাদের দুইভাবে চিহ্নিত করেছি। একটা পূর্ব পরিচিত কিংবা আলাপ হয়েছে এমন মানুষ। আরেকটা সোস্যাল মিডিয়া এক্টিভিটি এনালাইসিস করে। আমি এক্ষেত্রে যাদের পেয়েছি, তারা খুনি পক্ষের সক্রিয় সদস্য কিংবা সমর্থক। যারা ৪/৫ আগস্টেও খুনের হুমকি দিয়েছেন। কেউ কেউ খুন করার জন্য হুলিয়া জারি করে আন্দোলনকারীদের খুঁজেছেন। ফলে তারা তাদের পূর্ব এজেন্ডা নিয়েই এগোচ্ছেন। অন্য যারা হতাশ হচ্ছেন, তাদের অনেকেই আন্দোলনের পক্ষে, কিন্তু মাঠের নৈরাজ্য কারা করছে সে ব্যাপারে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল নন। মাঠের দায়িত্বশীলদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করলে আমার বিশ্বাস তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরবে।
উ. গণঅভ্যুত্থানের অগ্রসেনানী ছাত্রবন্ধুরা। এই ছাত্রদের বৃহৎ অংশ তো প্রশিক্ষিত বিপ্লবী নয়ই। এরা বেশি সংখ্যক কোনো দলাদলিতে ছিলো না কোনোদিন। আবার কোনো সংঘ সমিতিতেওই ছিলো না। শোষকেরা এদের উপর নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বজায় রাখার জন্য নানাভাবে নানাকিছুতে বিভ্রান্ত করে রেখেছিল। যে ছাত্র শিখল, ‘শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’- সেই ছাত্র বিক্ষোভে ফেটে পড়লো খুনের বিরুদ্ধে। প্রলম্বিত আলাপ না করে বলছি- এদের ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা কেবল বাতুলতা। এরা যেহেতু সুসংহত কোনো দলের নয়। এরা ভিন্ন মত ও পথ থেকে এসেছে। ফলে উপরিদৃষ্টিতে মনে হবে, এরা বিভক্ত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, নানাভাবে এদের লক্ষ্য একই। যেটুুকু শৃঙ্খলা দরকার, সেটি যারা বোঝেন, যাদের সন্তান, যাদের ভাই, যাদের বোন তারা শুধরে দিতে তৎপরতা চালাচ্ছেন।
৩.
আমাদের বুঝতে হবে, আমরা দীর্ঘদিন একটা নৈরাজ্যকর আর দখলদারি স্বভাবের ভেতরে বসবাস করে আসছি। ফলে কখনো কখনো আমরাও দখলদার মনোভাব পোষণ করেছি। নিজেদের ও বৃহত্তর অর্থে দেশের সংস্কারের জন্য প্রকৃত প্রস্তাবে সময় লাগবে। এর জন্য প্রয়োজন ধৈর্য্য ও সুধীর ভাবনা, কল্পনা, পরিকল্পনা এবং কাজে যুক্ত থাকা। অস্থিরতা কোনো সমাধান দিবে না। যারা বিভেদ ও বিভক্তি সৃষ্টি করবে, যারা পূর্বের ন্যায় বৈষম্য সৃষ্টি করবে তাদের নিবৃত্ত করা, প্রতিহত করা অগ্রাধিকারে রেখে এগোতে হবে। এতে বিশৃঙ্খলা দমন হয়ে শৃঙ্খলা ফিরবে এবং সংস্কারের কাজ অব্যাহত থাকবে।
৪.
ছাত্ররা আপদকালীন ট্রাফিকিং কিংবা পরিচ্ছন্নতার কাজগুলো করছেন। এইগুলো একদম নতুন নয়। তারা নানা রকম স্বেচ্ছাসেবী কাজের সঙ্গে পূর্ব হতেই যুক্ত ছিলো। দেশ গঠনে তাদের ভূমিকাও জারি ছিলো। ফলে তারা রাষ্ট্র সংস্কারে এসে রাস্তা পরিষ্কার করছে, এই বলে হেলা করার কিছু নেই। একথা তো অবশ্য ঠিক বিপ্লবীদের কাজ তো কেবল ট্রাফিকিং কিংবা পরিষ্কার করা নয়। তাদের কাজ ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা উৎখাত করে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, কল্যাণ রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এর জন্য প্রতিটা স্তরে সমস্যা চিহ্নিত করা প্রথম কাজ, দ্বিতীয় কাজ হলো সমাধান খোঁজা। এই দুটো কাজ পৃথকভাবে নোট করে গণশুনানী বা সহজ পথে সংকলিত করে সংস্কারের জন্য ফোর্স করা। মানে জনগণের টাকায় যে পরিচ্ছন্নতার জন্য, শিক্ষা দেওয়ার জন্য, চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নিয়োজিত, তার কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া এবং সে যেন কাজ করে সেই ব্যবস্থাপনা সৃষ্টি করা। আমার বিশ্বাস, দেশের মানুষ আমরা স্বনিষ্ঠ হলে এটি অবশ্যই সম্ভব এবং দ্রতই বাস্তবায়িত হবে।
রেজাউল করিম শেখ
(কবি ও সংগঠক)
প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান, নপম।
Lorem Ipsum has been the industry’s standard dummy text ever since the 1500s, when an unknown printer took a galley of type and scrambled it to make a type specimen.
Lorem Ipsum has been the industry’s standard dummy text ever since the 1500s, when an unknown printer took a galley of type and scrambled it to make a type specimen.
Lorem Ipsum has been the industry’s standard dummy text ever since the 1500s, when an unknown printer took a galley of type and scrambled it to make a type specimen.