হোম | শিল্প ও সাহিত্য
  • বিস্তারিত খবর

অলোক আচার্যের তিনটি অণুগল্প

/ ১০-১১-২০২৪
অলোক আচার্যের তিনটি অণুগল্প

দশ বছর পর
আমি বরাবরই ট্রেনের জানালার পাশে বসতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তাছাড়া বমি বমি ভাব হয়। অন্য কোথাও বসলে দম বন্ধ লাগে। সন্ধ্যায় রাজশাহী রেল স্টেশন থেকে টিকিট কিনে সিটে আসতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সিটটা জানালার পাশে নয়। তার এক সিট পরে। আমি বসে অপেক্ষা করছি আমার সহযাত্রীর জন্য। অবশেষে তিনি এলেন। চোখে কালো গ্লাস। ‘এক্সকিউজ মি’ বলেই আমার পাশে এসে বসলেন। সে-ই চেনা ঘ্রাণ। চোখে চশমা থাকলেও চিনতে অসুবিধা হচ্ছিল না। দশ বছর কি খুব বেশি সময়? আজ বহুদিন পরে জানালার পাশে না বসেও আমার খারাপ লাগলো না।

ভাড়া
গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুর। আজকের গরমটাও ভ্যাপসা ধরনের। অল্পতেই হাঁপ ধরে যায়। এমন সময় উঠতি বয়সী একটি ছেলে এসে জানতে চায়, ‘অ্যাঁই রিকশা যাবে?’ রহিম মিয়ার চোখটা বুঁজে এসেছিল। চোখ খুলে দেখে তার ছেলের চেয়েও ছোট একজন দাঁড়িয়ে আছে। হাতে ঘড়ি, মাথার চুল ব্যাক ব্রাশ করে আঁচড়ানো, গায়ে চকমকে শার্ট, গা থেকে কড়া সুগন্ধি আসছে।

‘সামনে চলো’ বলেই লাফ দিয়ে রিকশায় উঠে বসে। আদেশের সুরে বলে, ‘জোরে চালাও’। দেখেই বোঝা যায় বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে ছেলেটি। মাঝে মাঝে শিস বাজাচ্ছে। রিকশা থেকে নেমে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে বিশ টাকার একটা নোট রহিম মিয়ার হাতে দেয়। দিয়েই হনহন করে হাঁটতে থাকে ছেলেটি। রহিম মিয়া নোটটা হাতে নিয়ে যুবককে পেছন থেকে ডাক দেয়।
‘এই যে, শোনেন?’ পেছন ডাকে যেন ছেলেটি মহাবিরক্ত হয়। রাগতঃস্বরে জানতে চায়, ‘কী হইছে?’
‘আর দশটা টাকা দেন ভাই। এতদূর আইলেন।’
যুবকটি তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে, ‘এইটুকু রাস্তার এত ভাড়া?’

রহিম মিয়া মৃদুস্বরে তার ন্যায্য ভাড়ার কথা জানায়। কিন্তু ছেলেটি উত্তেজিত হতেই থাকে। একসময় এই বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা কথা না শোনায় ছেলেটি রহিম মিয়ার গালে কাছে থাপ্পড়ের মতো এগিয়ে নিয়ে যায়। তারপর সোজা হাঁটতে থাকে। রহিম মিয়া আর কিছু বলার সাহস পায় না। বিস্ময় চোখে তাকিয়ে থাকে চলে যাওয়ার দিকে!

একটি আত্মহত্যা
কেন যে আত্মহত্যার জন্য এই মুহূর্তকেই বেছে নিলাম কে জানে! আমি বরাবরই রহস্য পছন্দ করি। তাই বলে নিজের মৃত্যুতেও রহস্য! পৃথিবীতে কতই যে রহস্যজনক ঘটনা ঘটে, তার খোঁজ কে রাখে? এই যে কাল যখন নদীর তীরে আমার মৃতদেহ পাওয়া যাবে—দর্শকদের মনে কত রহস্য ঘুরপাক খাবে? কিন্তু আসল রহস্য কেউ জানতে পারবে না। শখ করে কেউ আত্মহত্যা করতে পারে—এই রহস্য কারও মাথায় আসার কথা নয়। এই ব্রিজ, নিচে উত্তাল যমুনার জলরাশি আর তার ওপর চাঁদের আলো চিকচিক করছে। মৃদু ঢেউয়ের শব্দ কানে আসছে। একটি কাব্যিক মুহূর্ত। অন্য সময় হলে অবশ্যই সংক্ষিপ্ত কবিতা লিখতাম। ভয়ংকর সুন্দর একটি কবিতা। মৃত্যুর আগে কেউ কি কবিতা লিখেছিল? আজ এই ভয়ংকর সুন্দরের কাছেই আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছি। কোনো চিরকুট লিখে রাখিনি। কী-ইবা লেখার ছিল আমার! যে সুন্দরের কাছে আজীবন প্রতীক্ষা করেছি—আজ তার সাথেই মিশে যাওয়ার অপেক্ষায় আমি!

3 Comments:

  1. Lorem Ipsum has been the industry’s standard dummy text ever since the 1500s, when an unknown printer took a galley of type and scrambled it to make a type specimen.

    1. Lorem Ipsum has been the industry’s standard dummy text ever since the 1500s, when an unknown printer took a galley of type and scrambled it to make a type specimen.

    Lorem Ipsum has been the industry’s standard dummy text ever since the 1500s, when an unknown printer took a galley of type and scrambled it to make a type specimen.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked